Tuesday 27 March 2018

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা

অস্মিতা



দুধে আলতায় পা দিয়ে যেদিন এ বাড়িতে পা রেখেছিল অসিমা, সেদিন ই মনে মনে জানত এ বিয়ে তার কাছে নাম মাত্র। Typical মধ্যবিত্ত সংসারে সে কোনদিনই মানিয়ে নিতে পারবে না। এমন ও তো নয়, যে বাবা মায়ের কাছে গিয়ে বলবে সমস্যার কথাগুলো। ভালবেসে বিয়ে বলে কথা। তারা কোনদিনও নিজেদের  মেয়ের যোগ্য পাত্র বলে মনে করেননি, আজও করবে না।
বিয়ের প্রথম এক বছর কেটে গেছিল সপ্নের মতন।প্রতিদিনই কারোর না কারোর বাড়ি যাওয়া। আত্মীয় সজনদের সাথে আলাপ পরিচয়। কমলেশের বাবা মা ও বেশ গর্ব প্রকাশ করেছিল ছেলের বউকে নিয়ে। 

বাগ বাজারের এক ধনি পরিবারের মেয়ে অসিমা। জীবনের বাইশটা বছর সে নিজের খেয়ালখুশিতে কাটিয়েছে। কলেজেই প্রেম ওদের দুজনের। সেখান থেকে বাড়িতে জানাজানি, তারপর বিয়ে। বিয়ের পর নিজের পি এইচ ডি টা করবে বলে মনস্থির করেছিল ভালবাসার হাওয়ায় ভেসে চলা মেয়েটা। সে স্বপ্ন কবেই দুচোখ বন্ধ করে স্থান নিয়েছে মনের এক ধুল পড়া কোনে।

এক সরকারি অফিসের ক্লার্ক এর চাকরি কমলেশের। বাড়ির বউ চাকরি করলে মধ্যবিত্তের ম্যান রক্ষা হয়না নাকি। তাই কমলেশের চাকরির টাকাতে সংসার চলে চারজনের। মায়ের প্রবল ইচ্ছে এই চারজনকে পাঁচজন করার। অসিমা  জানে এই চাকরিতে কোনদিনও তা সম্ভব নয়। নিজের সমস্ত আশা বিসর্জন দিয়ে সে শুধু ঘরের মধ্যে বসে থাকে চুপচাপ। এক কালের দস্যি মেয়ে আজ বড় শান্ত, পরিস্তিতি করে তুলেছে অজ্ঞানুবর্তি। কমলেশের মা যেদিন প্রথম তাকে দেখেছিল, সেদিন রাতেই তার ছেলেকে বলে, "বাঙালি ঘরের বউ এত ছোট চুল হলে কি করে হবে? ওকে বলেদিস কোমর অবধি চুল হলে তবে বিয়ের পিড়িতে বসতে।" নিজের মায়ের কথামত অসিমাকে তাই করতে বলে সে। এও বলে দেয় যে, বিয়ের পর চাকরি করা চলবে না। পড়াশোনা হলে হতে পারে, চাকুরি নয়। যে বাড়িতে রাতদিন  দুমুঠো খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সে বাড়িতে নাকি পি এইচ ডি।

হাঁসিও পায় তার, নিজের বোকামানুষীর কথা ভেবে। ভালবাসায় সব ছেড়েছে সে।  Dress, Jeans, Top ছেড়ে শাড়িতে পিঠ ঢাকা দেওয়া থেকে শুরু করে জল গড়িয়ে না খাওয়া মেয়ে আজ রান্না করে পরিবারের জন্য। ভালবাসার কোন অভাব নেই এই বাড়িতে। তবুও কিছু কিছু জিনিস যেন ধু ধু মরীচিকার মত। হয়তো অভাব শুধু সময়ের।কমলেশ বেরিয়ে যায় সকাল ন'টায়। তার মধ্যে সব রান্না বান্না সেরে খেতে দিতে হয় তাকে। তারপর শুরু হয় জলখাবার করে দেওয়া। এইসব  করতেই আড়াইটে বেজে যায়। Diet Conscious মেয়ে আজ বেলা তিনটেয় ভাত খায়। দিনের ঐ দুপুর টুকুই শে শুধু পায় নিজের জন্য একটু। প্রিয় গল্পের বইএর পাতায় হাত বুলায়, চোখ বন্ধ করে তার গন্ধ অনুভব করে সে- যেন শান্তি খুঁজে পায় মেয়েটা।

মনে পড়েযায় ছোটবেলার বাবার সেই কথাগুল, "মেয়েদের জীবনে অনেক কিছু ছাড়তে হয়। দুএকটা ছোটখাটো স্বাধীনতা বিসর্জন দিলে মানুষ মরে যায় না।" ছোট বেলায় সে বুঝত না এখন বঝে না- স্বাধীনতার আবার ছোট বড় কি? 

4 comments:

প্রতিবাদ ১

প্রতিবাদ ১ মিষ্টিভাষি টিভি তে দেখে শিখেছিলাম ,  শিশুশ্রমিক রাখা একটা অপরাধ। সেই কারনে কোন এক মফস্বল এলাকায় একটা শিশুকে চা দোকান...